পরিবারে অসুস্থ তিন ছেলে চিকিৎসা করা সামর্থ্য নাই
শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: আট সদস্যের একটি অসহায় পরিবার। সামান্য উপার্জন ক্ষম ব্যক্তি একজন। ভাঙ্গা একটি কুটিরে বসবাস। জীবন চলে খুবই অভাব অনাটনের মধ্যে।দুই বেলা খেতে গেলে অনেক কষ্ট করে খেতে হয়।এক কথায় বাড়িতে নুন আনতে পানতা ফুরায়। এরই মাঝে দীর্ঘদিন যাবত কঠিন রোগে ভুগছে ৩ জন। চিকিৎসা করা তো দুরের কথা, অর্থাভাবে আজও ডাঃকে দেখাতে পর্যন্ত পারেনি। তাহলে ঐ পরিবারটির কথাই ভাবুন! এদের জীবনে সুখশান্তি কেমন হতে পারে। অথচ একই ইউনিয়নেই ক্ষমতাসীন দলের নেতা, প্রভাবশালী এমপি, শিল্পপতি ও একজন বিচারপতির বাড়ি। রয়েছে অনেক কোটি পতি। এরপরেও এই অসহায় পরিবারটির খোঁজখবর রাখার যেন কেউ নেই। বিশ্ব মানবতার কড়াল গ্রাসে চাপা পড়ে হাড়িয়ে যাচ্ছে এমন অসংখ্য পরিবার। যাদেরও রয়েছে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবার মৌলিক অধিকার। এরপরে থেমে থাকবেনা পৃথিবী, থেকে থাকবেনা সমাজের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর মানুষ। নিশ্চয় তাদের পাশে এগিয়ে আসবেন আপনার মতো অসংখ্য ভালো মানুষ। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের পুর্ব সাড়ডুবি এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডে এমনি একটি পরিবারের সন্ধ্যান মিলেছে। ফাস্টফুড, চাইনি, ইতালিয়ান এক বেলার খাবার খেতে অনেকেই লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে। অনেকেই ফাইভ স্টার হোটেলে সুন্দরী রমণী, মডেলদের নিয়ে ফুর্তি, নাইট ক্লাবে বন্ধুবান্ধব নিয়ে আমোদ ফুর্তিতে লক্ষলক্ষ টাকা খরচ করেন। অনেকেই শতশত কোটি টাকা খরচ করে বিলাশ বহুল আলিসান গাড়ি, বাড়ি নির্মাণ করেছে। অনেকেই তাদের কঠিন রোগ তো দুরের কথা সামান্য মাথা গরম বা আঙুলের ব্যথার কারনে বিদেশ গিয়ে লক্ষলক্ষ টাকা খরচ করে চিকিৎসার বিলাসিতা করে। এগুলো সবাই জানি কিন্তু আমরা এটা জানিনা, এই দেশে এখনো অনেক অভাবগ্রস্ত অসহায় পরিবার আছে যাদের ভাগ্যে দিনে এক বেলার মোটা ভাত পর্যন্ত যোটে না, অর্থাভাবে পরিবারের অসুস্থতাজনিত রোগীদের ডাঃকে দেখাতে পর্যন্ত পারছেনা। নিদারুণ কষ্টে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। আর এই অসহায় লোকগুলোর জীবন বৈচিত্র্য নিয়ে কেউ ভাবেননা বা কারও ভাব্বার সময় পর্যন্ত নেই। মানুষের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। যেটা প্রতিনিয়ত সংবাদের পাতায় সবার নজরে আসেও আসেনা। শুক্রবার সকালে সরে জমিনে, ঐ উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়ন (মিলন বাজারের পাশে) পুর্ব সাড়ডুবি এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডের গিয়ে দেখা যায়, ঐ এলাকার মৃত্যু আমানতুল্লাহর ছেলে আজিমউদ্দিন (৭৫)। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আগে অন্যের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে খেয়েছিলেন। বয়স হওয়ায় এখন আর কেউ তাকে কাজে নেন না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বড় ছেলে আবদুর রাজ্জাক মিন্টুর (৪০)। সে ঢাকায় ভাড়ায় রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। ছোট ছেলে আশরাফুল আলম (৩৩) দীর্ঘদিন যাবত মাথার সমস্যায় ভুগছে। সে সবসময় ভুল বলে, মানুষকে ডাংমার করে। ফলে অনেকদিন যাবত তাকে ছিকল দিয়ে বাধা ছিলো। এখন অবশ্য তা নেই। বড় ছেলে রিকশাচালক আবদুর রাজ্জাক মিন্টুর দুটি ছেলে। এরমধ্যে সাইফুর রহমান (১৩) জন্ম থেকে চিৎকার করে, সব সময় ঘাড় নারে, মাটিতে গড়াগড়ি করে, কিছুই খেতে চায়না। আর এক ছেলে রহমত (৫) চোখের সমস্যা এক দিকে তাকিয়ে থাকে। ৩ শতক জমির উপর জীর্ণশীর্ণ ভাঙ্গা কুটিরে পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে তাদের বসবাস। পায়নি কোন সরকারি সাহায্য সহযোগিতা। ইউপি মেম্বার চেয়ারম্যানও রাখেনা তাদের কোন খোজ খবর। অসুস্থতাজনিত ঐ ৩টি ছেলের রোগ ও চিকিৎসার বিষয় জানতে চাইলে বৃদ্ধ আজিমউদ্দিন চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, বাবারে আমাদের জীবনে বেচে থেকে কোন লাভ নেই। এতো কষ্টের চাইতে মরে যাওয়াই অনেক ভালো। অসুস্থ এই ৩টি ছেলের চিকিৎসা করা তো দুরের কথা, ডাঃকে ভিজিট দিব সে টাকাই আমার নেই। বড় ছেলে মিন্টু অন্যের রিকশা ভাড়ায় চালিয়ে সামান্য যে টাকা পায় তাদিয়ে সংসারই চলেনা। একবেলা খেলে আর এক বেলা নেই। পড়নের কাপড় নেই। এরপরেও আমি তাদের চিকিৎসা করব কিভাবে। ঐ বৃদ্ধার ছোট ছেলে আশরাফুল আলম সম্পর্কে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত সে মাথার সমস্যায় ভুগছে। সে সবসময় ভুল বলে, মানুষকে ডাংমার করে। ফলে অনেকদিন যাবত তাকে ছিকল দিয়ে বেধে রাখা ছিলো। পরে কবিরাজি চিকিৎসা করলে সে কিছুটা সুস্থ হলে তার ছিকল খুলে দেওয়া হয়। এখন সে আগের মতো আবারো মানুষকে মারডাং করা শুরু করেছে বলে জানা ঐ বৃদ্ধ। কিছুক্ষণ কাদার পরে ঐ বৃদ্ধ আরও বলেন, আমার দুটি নাতি। এরমধ্যে সাইফুর রহমান জন্ম থেকে চিৎকার করে, সব সময় ঘাড় নারে, মাটিতে গড়াগড়ি করে, কিছুই খেতে চায়না। শুধু কাদে আর কাদে। আর রহমত (৫) চোখের সমস্যা এক দিকে তাকিয়ে থাকে। রাস্তা হাটতে উল্টে পড়ে। বৃদ্ধ আজিমউদ্দিন সমাজের বিত্তবানদের কাছে আকুল আবেদন করে বলেন, অসুস্থতাজনিত তিনটি ছেলের কেউ চিকিৎসার করলে বা চিকিৎসার খরচের দিলে তার পরিবার হয়ত একটু সুখের আশা দেখতে পাত। তাদের এহকাল ও পরকাল উভয়েই মঙ্গল হত। যোগাযোগের ছেলে মিন্টু ০১৭৯০৫৪১৩৮৪। প্রতিবেশী মিজান ০১৭৩৭৬৮২৫৬০।